ইতালীর স্কুলে সাহসিকতায় সাটিফিকেট
ইতালীর স্কুলের নাসারীতে গল্পের মধ্যেই শুরু হয় শিশুদের মগজ ধোলাই। এই ক্লাসে সাধারনত কোন পড়াশুনা করায় না। কয়েক ঘর ভতি শুধু খেলনা আর খেলনা। সাথে রঙ পেন্সিল,কাগজ ইত্যাদি।বাচ্চাদের কাজ হলো খেলনা দিয়ে খেলবে আর শিক্ষিকারা যা রঙ করতে বলবে তা রঙ করবে।আর শিক্ষিকারা মজার মজার সব গল্প বলবে যা বাচ্চারা হা করে শুনবে। শেখানো হয় ছড়া,শেখানো হয় দলীয় সংগীত,শেখানো হয় আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক কিছু বিষয় যা শিশুদের কাছে অনেক আশ্চর্য্যের।শেখানো হয় হাতের পাচটি আংগুলের নাম,শেখানো হয় ভদ্রতা শেখানো হয় অনেক কিছু যা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ওয়ানের একজন ছাত্র এ,বি,সি,ডি কিংবা ১,২,৩,৪ কোন কিছুই পারে না। ক্লাস ওয়ানে শুরু হলো আস্তে আস্তে সবকিছু শিখানো।। ১ থেকে ২০ পর্যন্ত । ক্লাস ওয়ানে শুধু শেখানো হলো যোগ। ২+২ কত কিংবা ৫+৩ কত।কোন ভাবেই যোগফল ২০ এর মাত্রা অতিক্রম করেনি।এ,বি,সি,ডির ক্ষেত্রেও তাই।শুধুমাত্র এলফাবেটগুলো শেখানো হয়েছে। ক্লাস টু তে গিয়ে শেখানো হলো ৫০ পর্যন্ত।ক্লাস টুর ছাত্র কিন্তু সে ৫০ পর্যন্ত গুনতে পারে।এখানে যোগের পাশাপাশি শেখানো হলো বিয়োগ।পাশাপাশি সংযুক্ত হলো ইংলিশ,ধর্মীয় এবং টেক্সট,ইতালিয়ান,ছবি আঁকা ইত্যাদি ক্লাস।
ক্লাস থ্রী তে এসে শিখানো হবে ১০০ পর্যন্ত গোনা। সাথে যোগ,বিয়োগ,গুণন,ভাগ।ক্লাস ওয়ানে শিখেছে ২০ পর্যন্ত যোগ,ক্লাস টুতে শিখেছে ৫০ পর্যন্ত যোগ এবং বিয়োগ,ক্লাস থ্রীতে শিখেছে ১০০ পর্যন্ত গোণা এবং যোগ,বিয়োগ,গুণন,ভাগ।এক সংগে সব চাপ দেয়নি যাতে তাদের কচি মাথাতে প্রেসার না পড়ে এবং যোগ,বিয়োগ,গুণন,ভাগ এর চক্করে পড়ে দিশেহারা না হয়ে যায়।ও যখন ক্লাস থ্রীতে উঠলো তখন যোগ হলো সায়েন্স,জিওগ্রাফী্র মত সাবজেক্ট।এখান থেকেই শুরু হলো শিক্ষিকাদের চেহারা পরিবর্তন।তারা বাচ্চাদের প্রফেশনালী শিক্ষাদান শুরু করলো।আপনি ক্লাস থ্রী কিংবা ফোরের বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেন পৃথিবী তৈরী হলো কিভাবে?আপনাকে লজিক দিয়ে,বিগ ব্যাংগের কাহিনী শুনিয়ে,২/৪টা গ্রহ নক্ষত্রের নাম সহ এমন ভাবে বুঝিয়ে বলবে যে আপনার মনে হবে আপনি আসলেই একটা আহাম্মক এই ছেলেটার কাছে।কিংবা কি বিষয়ে জানতে চান? প্রায় সবকিছু অত্যন্ত যুক্তির সাথে বুঝিয়ে দিবে।
ক্লাস ফাইভে ওদের পড়ানো হবে জন্ম রহস্য।মানেটা বুঝেছেন তো?একটা জিনিস না বললেই নয়,ক্লাসের বইয়ে রাস্তায় চলাচলের জন্য সমস্ত সিগন্যাল এবং রাস্তায় কোন সিগন্যালে কিভাবে চলতে হয় তা শিখানো হয়।এটা বাধ্যতামূলক।ছাত্র/ছাত্রীদের এরা এমন ভাবে গড়ে তোলে যে এদের মাথায় পড়া ছাড়া আর কিছু থাকে না।এরা যা কিছুই করে তা স্কুল কেদ্রিক।স্কুলেই পড়া মোটামুটি বুঝিয়ে দেয়।বাড়িতে যেটুকু দেয় তা ঘন্টা দুয়েকের পড়া।অর্থাৎ ক্লাসে ১০টা অংক করালো ২টা বাড়ির জন্য দিলো এই টাইপের আর কি।
শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলা ? ভুলেও এটা কল্পনা করবেন না।কিন্তু এটা আবার ভাববেন না যে শিক্ষক/শিক্ষিকাদের এরা ভয় পায় না।কঠিন ভয় পায়।এই ভয় ভালবাসা মিশ্রিত।পড়া না পারলে ক্লাসে লজ্জিত হওয়ার ভয়।
স্কুলে প্রতি বছর ২/৩টা শিক্ষা সফর থাকেই।এছাড়াও স্কুলে মাঝে মাঝে ট্রাফিক পুলিশ আসে রাস্তার নিয়ম কানুন শিখানোর জন্য।মাঝে মাঝে শিশুদের স্কুলের তরফ থেকে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় তা শিখানো হয়।এছাড়া বছরে দু/একবার পুলিশ এসে শিখিয়ে দিয়ে যায় বিপদমুক্ত ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিয়মাবলি।আরো আছে।স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কোন রেষ্টুরেন্টে।সেখানে বাচাদের শিখানো হয় কি ভাবে খাবারের অর্ডার দিতে হয়।এরকম আরো বহু কিছু।আসলে এরা খুব টেকনিকে এবং ধৈর্যের সংগে সবকিছু করে যা দেখে আপনি অবাক হবেন।এগুলো লিখে বোঝানো সম্ভব নয় যদি বাস্তবে না দেখেন।একটা মগজ ধোলাইয়ের নমুনা দেওয়া যাক যা শিশু হ্নদয়ে অনেক কিছু,
তিন বছর বয়সে বাচ্চাদের টিকা দেবার সময় ভদ্র মহিলা প্রথমে বাচ্চার সংগে অনেক গল্প করবে। এরপর টিকা দিয়ে দিবে। ভদ্র মহিলা বাচ্চার হাতে একেবারে টাইপ করা সত্যিকারের একটা সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন নাম সহ।সেখানে লেখা আছে সাহসিকতার জন্য সার্টিফিকেট।
বছরে দু বার স্কুল থেকে জানানো হয় অভিভাবকদের দেখা করার জন্য।ওখানে শিক্ষিকারা বাচ্চার বর্তমান অবস্থা,ক্লাসে তার আচরন এবং কি করলে আরো ভালো হবে সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেয়।কো্নো বার্ষিক পরীক্ষা নেই,বছরের ক্লাস পরীক্ষায় উপর ফলাফল নির্ধারন করা হয়।রেজাল্ট হলো খুব ভালো,ভালো,মোটামুটি,কোনমতে এই টাইপের।অর্থাৎ অমুক প্রথম তমুক দ্বিতীয় এগুলো নাই।
প্রতিটি স্কুল ছুটির পর পৌরপুলিশ নিজ দায়িত্বে শিশুদের রাস্তা পারাপার করে দেয়।এছাড়া কিছু অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আছেন যারা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিত্বে বাচ্চাদের সাহায্য করে।একজন মানুষ অবসরে গেলে তো বাড়িতে বসেই থাকে।তো অনেকেই আছে বাড়িতে বসে না থেকে এরকম সমাজ সেবা করে।